অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফিলিস্তিনি জনগণ যাতে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে সে লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিন এমন পরিস্থিতির সাক্ষী হয়েছে যার কারণে তার ভৌগলিক কাঠামো দিন দিন হ্রাসই পাচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডের ৮৫ ভাগ ভূমি ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর দখলে রয়েছে।
এ অবস্থার প্রধান কারণ হচ্ছে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর সম্প্রসারণবাদী ও দখলদারিত্বের প্রকৃতির পাশাপাশি বৃহৎ শক্তিগুলোর সমর্থন এবং জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয়তা। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি জনগণের তাদের নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার বিষয়ে প্রস্তাব পাস এমন একটি পদক্ষেপ যেটি ফিলিস্তিনি জনগণের ভৌগোলিক অধিকারের উপর জোর দিচ্ছে। ফলে ফিলিস্তিনিরা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ এবং স্বাধীনতা অর্জনের অধিকারকে এবং এটিকে ফিলিস্তিনি সমস্যার একটি ন্যায্য ও ব্যাপক সমাধান অর্জনের প্রধান শর্ত বলে মনে করে। ১৬৮টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে এবং ছয়টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয় এবং আটটি দেশ ভোট দানে বিরত থাকে। ১৬৮টি দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়ার অর্থ হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট ভৌগলিক অবস্থানসহ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে বেঁচে থাকার বিষয়ে ফিলিস্তিনি জাতির অধিকারের প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থন।
এই প্রেক্ষাপটে হামাস আন্দোলনের সদস্য হাশেম কাসেম বলেছেন, এই প্রস্তাবের পক্ষে সর্বাধিক সমর্থন ফিলিস্তিনি জাতির ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার পূরণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান সমর্থন ও বিশ্বাস ইহুদিদের অবৈধ বসতি ভাঙনের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি ভূমি দখল এবং দেশটির বিরুদ্ধে আগ্রাসন ও রক্তক্ষয়ী অপরাধের জন্য তেল আবিবের নেতাদের বিচারের প্রতি ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই রেজোলিউশনে দুটি বার্তাও রয়েছে। প্রথম বার্তা হল; জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেটি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে এবং যেটি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া ও ন্যায়বিচারের কাঠামোর মধ্যে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে না যদিও বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ফিলিস্তিনি জাতির অধিকারকে সমর্থন করে এবং ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর দখলদারিত্বের নিন্দা করে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ এই সংখ্যাগরিষ্ঠের কণ্ঠস্বর শুনতে পাই না। তার তিন স্থায়ী পশ্চিমা সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের সমর্থনে এই কাউন্সিল ফিলিস্তিনের সমর্থনে এবং ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনও প্রস্তাব পাস করে না। এমনকি এই তিন পশ্চিমা দেশ জাতিসংঘে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দখলদার শাসকগোষ্ঠীর অপরাধ উত্থাপন করারও অনুমতি দেয় না।
আরেকটি বার্তা হল যদিও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের সমর্থনে প্রস্তাব গ্রহণ যদিও একটি উপযুক্ত পদক্ষেপ তবে এই ধরণের প্রস্তাবগুলো ফিলিস্তিন ইস্যুতে এবং তেল আবিবের অপরাধজ্ঞ বন্ধ করতে কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। কারণ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিন নিয়ে পাঁচটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। জাতিসংঘ ফিলিস্তিন ইস্যুতে তার নিষ্ক্রিয় অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে এবং আরও গতিশীল ভূমিকা পালন করতে পারে যখন এই সংস্থার বৃহৎ শক্তিগুলো ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে সমর্থন করা বন্ধ করবে এবং সংস্থাটিকে অসম্মান করার দিকে আর অগ্রসর না হয়।
এ প্রসঙ্গে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি ফিলিস্তিনি জাতি এবং এর অপরিবর্তনশীল অধিকারগুলোকে সমর্থন করার ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব পালন করতে এবং দখলদারদের মোকাবিলায় বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
Leave a Reply